ঘুমে থাকার কারণে ফজর ছুটে গেলে গোনাহগার হবে কি?

ঘুমে থাকার কারণে ফজর ছুটে গেলে গোনাহগার হবে কি?

– সাইফুদ্দিন গাজী
৩০ জিলহজ, ১৪৪২ হিজরী

প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রাতে ঘুমালে ফজর তরক হয়ে যায়। তাই সে ঠিক করলো সে রাতে ঘুমাবে না, ফজর পড়ে একবারে ঘুমাবে। তার এই সিদ্ধান্ত কি সঠিক?

সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার পরেও কারও যদি সালাতের ওয়াক্তে ঘুম না ভাঙে এবং কাযা হয়ে যায় তাহলে কি সে শাস্তির আওয়াত পড়বে?

উত্তর :

ফজর ছু‌টে যাওয়া কো‌নো ম‌ু‌মি‌নের অভ্যাস হ‌তে পা‌রে না। আবার ফজর পাওয়ার জন্য সারারাত জে‌গে থাকাও স‌ঠিক সিদ্ধান্ত হ‌তে পা‌রে না। স্বাভা‌বিক অবস্থায় এটা কারও নিয়ম হওয়া কাম্যও নয়। হাঁ, কোনো কার‌ণে য‌দি কারও গভীর রাত জাগরণ কর‌তে হ‌য়ে‌ছে, এখন ঘু‌মি‌য়ে গে‌লে ফজর ছু‌টে যাওয়ার আশঙ্কা আ‌ছে; তা হ‌লে ফজ‌রের জন্য রা‌তের বাকী অংশ জাগরণ থাকা যে‌তে পা‌রে। এবং এ‌টিই উত্তম ও সতর্কতা।

ফজরে অব‌হেলা করা মুনা‌ফিকীর লক্ষণ ব‌লে হাদী‌সে উ‌ল্লেখ হ‌য়ে‌ছে। ইরশাদ হ‌য়ে‌ছে :

” لَيْسَ صَلَاةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا…

“মুনা‌ফিক‌দের ওপর ফজর ও এশার চাই‌তে ক‌ঠিন কো‌নো নামায নেই। য‌দি তারা এ দুই নামা‌যের ফযীলত জান‌তো, তা হ‌লে হামাগু‌ড়ি দি‌য়ে হ‌লেও তা‌তে অংশগ্রহণ কর‌তো।” (সহীহ বুখারী : ৬৫৭)

এ ক‌ঠিন হাদীস‌টি ফজর ও এশার জামাআত তরক করার ব্যাপা‌রে ব‌র্ণিত হ‌য়ে‌ছে। অনুমান করুন, যারা পু‌রো নামাযই পড়‌ছে না, তারা কোন পর্যা‌য়ে র‌য়ে‌ছে। আল্লাহর পানাহ!

এজন্য বুযুর্গা‌নে দীন ব‌লে‌ছেন, যার নিয়‌মিত ফজর ছু‌টে যা‌চ্ছে, সে অবশ্য আত্মসমা‌লোচনায় বসা উ‌চিত এবং নি‌জে‌কে সং‌শোধন করা জরু‌রি। দ্রুত তওবা ই‌স্তিগফার ও দুআর মাধ্য‌মে ফজ‌রের অংশগ্রহ‌ণের অভ্যাস গ‌ড়ে তোলা জরু‌রি।

ফজর পাওয়ার উপায় হ‌লো :

এশার পর দ্রুত ঘু‌মি‌য়ে পড়া। এশার পর গল্পগুজব করা, আড্ডা দেওয়া, মোবাইল/‌টি‌ভি ইত্যা‌তি নি‌য়ে মে‌তে থাকা মাকরূ‌হে তাহরী‌মি। হাদীস শরী‌ফে ‘মুসামারা’ তথা নি‌শিগল্প নি‌ষেধ করা হ‌য়ে‌ছে। (বুখারী : ৫৯৯)

এ নি‌ষেধাজ্ঞা অমান্য ক‌রে কেউ যদি বে‌শি রাত জাগ্রত থা‌কে, আর এ‌তে তার ফজর ছু‌টে যায়; তা হ‌লে সে গোনাহগার হ‌বে। এজন্য দ্রুত এমন কুঅভ্যাস বর্জন করা উ‌চিত এবং রা‌তে ঘুমা‌নোর রু‌টিন ঠিক উ‌চিত।

যথা সম‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে পড়ার প‌রেও য‌দি কেউ জাগ্রত হ‌তে না পা‌রে এবং যথাসম‌য়ে ফজর পড়‌তে না পা‌রে, তা হ‌লে সে গোনাহগার হ‌বে না, যতক্ষণ না জাগ্রত হওয়ার পর বিলম্ব ক‌রে।

অনুরূপভা‌বে জর‌ু‌রি সফর ও প্র‌য়োজনীয় সাংসা‌রিক কা‌জের কার‌ণে, নি‌জের অসুস্থতা বা কো‌নো রোগীর সেবার কার‌ণে, মেহমান‌কে সময় দেওয়ার কার‌ণে, জরু‌রি দীনী গ‌বেষণা, অধ্যয়ন ও মুযাকারার কার‌ণে ঘুমা‌তে বিলম্ব হয়ে‌ যায়; তা হ‌লে এ‌টি মাকরূহ হ‌বে না। এর কার‌ণে ফজ‌রের সময় ঘুম থে‌কে জাগ্রত হ‌তে না পার‌লে গোনাহগারও হ‌বে না।

নবী কারীম সা. ব‌লে‌ছেন :

إِنَّهُ لَيْسَ فِي النَّوْمِ تَفْرِيطٌ، إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ،

ঘু‌মের ম‌ধ্যে কো‌নো অপরাধ গন্য হয় না। অপরাধ গণ্য হ‌বে জাগ্রত অবস্থায় নামায নষ্ট হ‌লে। (তির‌মিযী : ১৭৭, আবু দাঊদ : ৪৪০)

‌মোটকথা, নি‌জেদের অব‌হেলা ও‌ আড্ডাবা‌জির কার‌ণে ঘুমা‌তে দে‌রি হয়, আর এ‌তে ফজর পড়‌তে অসু‌বিধা হয়, তা হ‌লে সে গোনাহগার হ‌বে। এজন্য তাওবা ই‌স্তিগফার করা জরু‌রি।

পক্ষান্ত‌রে য‌দি উপ‌রে ব‌র্ণিত শরঈ কো‌নো ওজ‌রের কার‌ণে ঘুমা‌তে দে‌রি হয় এবং ফজ‌র উঠ‌তে অপারগ হয়; এ‌তে সে গোনাহগার হ‌বে না। ত‌বে জাগ্রত হওয়ার প‌রে নামায কাযা কর‌তে বিলম্ব করা যা‌বে না। অ‌হেতুক বিলম্ব কর‌লে নামা‌যে অব‌হেলাকারী সাব্যস্ত হ‌বে এবং গোনাহগার হ‌বে। নবী‌জি সা. ব‌লে‌ছেন :

إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ،

ফজর ছু‌টে যাওয়ার পর করণীয় :

যে কার‌ণেই ফজর ছু‌টে যাক, ‌সর্বক্ষে‌ত্রে করণীয় হ‌লো, জাগ্রত হওয়ামাত্রই পাকপ‌বিত্র হ‌য়ে ফজ‌রের প্রস্তু‌তি গ্রহণ কর‌বে। ফজর পড়ার পূ‌র্বে অন্য কো‌নো দুনিয়াবী কা‌জে ব্যস্ত হ‌ওয়া যাবে না। পুরু‌ষেরা বাজা‌রে বা অ‌ফি‌সে যাওয়ার পূ‌র্বে, গরুছাগল নি‌য়ে মা‌ঠে যাওয়া পূ‌র্বে, ম‌হিলারা হা‌ড়িপা‌তিল‌ নি‌য়ে ঘা‌টে যাওয়ার পূ‌র্বেই‌ অবশ্যই ফজর প‌ড়ে নি‌বে। তা হ‌লে তার অব‌হেলা ব‌লে গণ্য হ‌বে না এবং তার গোনাহ হ‌বে না। ফজর‌কে কো‌নোভা‌বেই যোহর বা পরবর্তী‌ত সম‌য়ে পড়ার জন্য বিলম্ব করা যা‌বে না।

নবী‌জি সা. ইরশাদ ক‌রে‌ছেন :

فَإِذَا نَسِيَ أَحَدُكُمْ صَلَاةً، أَوْ نَامَ عَنْهَا، فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا وَمِنَ الْغَدِ لِلْوَقْتِ “.

‌তোমা‌দের কেউ য‌দি নামা‌যের কথা ভু‌লে যায়, অথবা ঘু‌মি‌য়ে থা‌কে; তা হ‌লে যখনই স্মরণ হয় তখনই নামায প‌ড়ে নি‌বে। এবং প‌রের দিন যথাসম‌য়ে পড়‌বে। ( আবু দাউদ : ৪৪০, তির‌মিযী ১৭৭)

ত‌বে ঠিক সূর্যোদ‌য়ের সময় নামায পড়‌বে না। কারণ, এ সময় নামায পড়তে নি‌ষেধ করা হ‌য়ে‌ছে। এজন্য ক‌য়েক‌ মি‌নিট অ‌পেক্ষা করার পর তারপর নামায শুরু করবে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *