– সাইফুদ্দীন গাজী
যারা বিয়ের উদ্দেশ্যে কথিত প্রেমসম্পর্কের বৈধতা দাবী করেন, তারা বিয়ের পূর্বে পরস্পর বোঝাপড়ার বিষয়টি যুক্তি হিসাবে খাড়া করান। কিন্তু এ খাড়া যুক্তি খোঁড়া হতে সময় লাগে না। কথিত বোঝাপড়া করতে গিয়ে যে জীবনের বহু বিপদ টেনে আনে, তা তারা ভুলেই থাকেন। ট্রাই-রিট্রাই করতে করতে নিজের ঈমান আখলাকের বারটা বাজিয়ে ছাড়ে। প্রবৃত্তির তাড়না ও ভোগ-নেশাকে শৃঙ্খলহীন করে ছাড়ে। চরিত্রের পবিত্র গায়ে মল ও কাদা মেখে দেয়। তারপরেও বিয়ে হয় না। হলেও সেটা টেকসই হয় না।
আপনি কি জানেন, বিয়ের আগে যারা সঙ্গীর সাথে ট্রাই বা কথিত বোঝাপড়া করেছে, তাদের বিয়েই সবচে বেশি ভঙ্গুর। তাদের বেশিরভাগই অসুখী। ভাঙ্গাবিয়ের ৮০ভাগই লাভমেরেজ। পশ্চিমের দিকে তাকান, পরস্পর বোঝাপড়া ও ট্রাই করতে করতে ওদের জীবন পার হয়ে যায়, কিন্তু ট্রাইও শেষ হয় না, বিয়েও হয় না। এর ভেতরে কতশত মধুমক্ষীর আগমন ও প্রস্থান ঘটে; তার ইয়ত্তা নেই।
বস্তুত এটা বড় ধরণের ধোঁকা ও প্রতারণা। শয়তান বড় ধোঁকাবাজ। নফস ও প্রবৃত্তি সীমাহীন লোভী। মাটিই তাকে তৃপ্ত করতে পারে, অন্যকিছু নয়। এজন্য নফসকে কোনো ছাড় নয়। শয়তানকে কোনো প্রশ্রয় নয়।
আপনি কি জানেন- আমাদের মা হযরত হাওয়া আ. -এর সাথে বাবা আদমের বিয়ে প্রেম করে হয়নি? ইবরাহীম, ইসমাঈল, মুসা, যাকারিয়া, ইউসুফ আ. কেউই বিয়ের আগে প্রেম করেনি? আমাদের নবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় স্ত্রীদের ছাড়া কোনো নারীকে স্পর্শ করেননি? তিনি কুমারীদের চাইতেও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। কোনো ওলী বুযুর্গ প্রেমকরে বিয়ে করেননি। আল্লাহর ওয়ালাদের বিয়ে প্রেম করে হয়নি।
আপনি-আমি যে বংশের সন্তান, সে বংশের উর্ধ্বতন পুরুষেরা কেউ কি প্রেম করে বিয়ে করেছে? পিতার উপরের কাউকে এমন পেতে কষ্ট হবে। তারা বিয়ের আগে সম্পর্ক তো দূরের থাক, অনেকের একটু দেখিদেখিও হয়নি। বিয়ের পর আমৃত্যু ছিল তাদের পবিত্র সম্পর্ক। নিজেদের বাইরে কাউকে নিয়ে তারা ভাবতেন না। পরস্পর ছিলেন বিশ্বস্ত ও আস্থাশীল। কিন্তু কথিত এ যুগের পরীক্ষিত প্রেমিক ও প্রেমিকারা? শীরী-ফরহাদ ও লাইলি-মজনুরা? হাতের মেহদী শুকানোর আগেই তাদের প্রেমরস কর্পূরের মতো উবে যায়।
মনে রাখবেন, যা কেবল আবেগ নির্ভর, তা ভেঙে পড়তে সময় লাগে না। যা হয় প্রবৃত্তির তাড়নায়, তা গান্ধা হতে সময় নেয় না। যা হয় শয়তানের প্ররোচনায়, তা নষ্ট হওয়া সময়ের ব্যাপার। যার ভিত্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টি, তা নিয়ে কেউ স্থায়ী সন্তুষ্ট ও সুখী হতে পারে না। কাজেই বিবেককে কাজে লাগান। আত্মাকে জয়ী করুন। প্রবৃত্তি দমন করুন। শয়তানকে পরাজিত করুন। নিয়মমত বিয়ে করুন। তারপর দোনোজন চুটিয়ে প্রেম করুন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করুন। জীবনভর সুখী ও সন্তুষ্ট থাকুন।