– সাইফুদ্দিন গাজী
প্রথমে যে কথাটি মনে রাখতে হবে, তা হলো, ইলমচর্চা ও আলিম হওয়া- দুটি আলাদা বিষয়। ইলমচর্চা যেকেউ করতে পারে, যখন-তখন হতে পারে। যে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কিছু-না-কিছু ইলমচর্চা সবসময় অব্যহত রাখা উচিত। চাই তিনি আলিম হোন আর অনালিম। এটি তার চর্চাকারীকে আরও উন্নত করবে। তার জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে, বুদ্ধিকে আলোকিত করবে, জীবনকে অলঙ্কৃত করবে। ইলমের সম্মানের চাইতে শ্রেষ্ঠ কোনো সম্মান নেই। জীবন ও জীবিকার যে পেশায় এবং যে কাজেই তিনি থাকুন না কেন, এটি তার জন্য কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ।
এই ইলমচর্চার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে ‘ফরযে আইন ইলম’ শিক্ষা করতে হবে। জরুরি ঈমান ও আকায়িদ শিক্ষা করা, জরুরি সুরা ও দুআ মুখস্ত করা, ইবাদত ও আহকাম শিক্ষা করা, লেনদেন-মোআমালার মাসায়েল জানা, মুআশারা ও আখলাক ঠিক করার মাসআলা শিক্ষা করা জরুরী। তার অবস্থা, অবস্থান ও পরিস্থিতির ইলম শিক্ষা করা ফরয। ইলমের এ চ্যাপটারগুলোকে সবার আগে শিখতে হবে।
এরপর কুরআনুল কারীম নাজেরা শিক্ষা করতে।
তারপর নবীজি সা. এর বিশুদ্ধ সীরাত শিক্ষা করতে হবে।
এ জরুরি ইলম কোনো বিজ্ঞ আলিম বা নিকটবর্তী ইমাম-খতীবের কাছে গিয়ে করা উচিত। অপারগতায় নির্বাচিত বইপত্র অধ্যয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে অনলাইন কোর্স চালু হয়েছে, নির্ভরযোগ্য কোনো একাডেমির মাধ্যমে সেটাতেও অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। কোনো অডিও ভিডিও দেখা বা শোনা যেতে পারে। সাধারণ ইলম চর্চায়ও এ উপায়-উপকরণগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে এগুলো ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ পড়া, শোনা, দেখা সুনির্বাচিত না হলে বিপদ হতে পারে। এক্ষেত্রে তার আলিম মুরব্বীর পরামর্শ তাকে রক্ষা করতে পারে, যার আবশ্যিকতার কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি।
তবে সাধারণ ইলম চর্চা ও অধ্যয়নকালে জেনারেল ভাইদের কয়েকটি কথা মেনে চলতে হবে।
ক) কোনো বিজ্ঞরআলিমের পরামর্শে এবং তার অধীনের থেকে ইলম চর্চা হওয়া।
খ) কোনো বিষয় না বুঝলে বা কোনো সংশয় জাগলে দ্রুত তাঁকে অবহিত করা এবং সংশয় দূর করে নেওয়া।
গ) বিজাতী, ভিন্নমতাবলম্বী ও বিতর্কিত লেখকের বইপত্র না পড়া। কারণ, ইলম পোক্তা হওয়ার আগে এসব পড়ার কারণে ঈমান আকীদায় খতরা দেখা দিতে পারে।
ঘ) বিতর্কিত কোনো মাসআলায় সিদ্ধান্ত বা ফায়সালা না করা। কেবল পড়ে যাবে, বা শুনে যাবে। ব্যবহারিক জীবনে অনুসরণ কেবল নিজের ফিকহ ও মাযহাবকেই করবে।
ঙ) নতুন পঠিত কোনো বিষয় প্রয়োগের আগে নিজ আলিম মুরুব্বীকে অবহিত করা।
চ) কোনো বিতর্কিত বিষয়ে মতামত না দেওয়া- এটা ঠিক, ওটা ভুল। একইভাবে ইসলামের গণ্ডির ভেতরে অবস্থানকারী বিবাদমান দলগুলোর ব্যাপারে কোনো নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না দেওয়া।
ছ) ইলম বৃদ্ধি ও হকপথ পাওয়ার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে দুআ করা।
জ) এভাবে যতই অধ্যয়ন করুন, বা জ্ঞান আহরণ করুন, নিজেকে আলিমদের সমকক্ষ মনে না করা। বরং নিজেকে তালিবে মনে করা।
ইনশাআল্লাহ, এভাবে ইলমচর্চা করলে তার ইলম বরকতপূর্ণ ও উপকারী হবে। এর দ্বারা সে ইলমের পথে অগ্রসর হতে পারবে। ক্ষতি ও ঝুঁকি থেকে বেঁচে যাবে।
জরুরি ফরযে আইন ইলম শেখার পরেই আসবে আলিম হওয়ার মেহনত। কোনো রাব্বানী আলিমের অধিনে দীনচর্চা করা, অতঃপর ফরযে আইন ইলম শেখার পরে যে ভাই ইলমের পথে আগুয়ান হতে চায়, তাকে স্বাগতম ও মুবারকবাদ। ইলমের ভুবনে তার আগমণ সুগম হোক, সার্থক হোক- এটাই আমাদের কামনা।
জেনারেল যারা আলিম হতে চান, তাদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী কোনো পোস্টে।